আমরুলি শাক

জন্মের সময় বাপ-মা নাম রেখেছিল পঞ্চানন। শিবঠাকুরের নামে। আজ কেউ ডাকে পঁচা কেউ পাঁইচো কেউবা পেঁচা। এইই হয়। লোকে যা ডাকবে তাতেই নাম-পরিচয়। এ বেচারীরও একসময় সংস্কৃত ভাষায় নাম ছিল অম্ললোনী। এখন তার ডাকনাম আমরুল বা আমরুলি। বড়ো মনোহর দেখতে (এবং স্বাদে)। তার গুষ্টিগোত্রের তত্ত্বতালাশ পণ্ডিতরা করেছেন, আমি সেদিকে যাব না। আমার কেবল খাই-খাই স্বভাব, আমি অতএব সে পথেই যাব।

* বড় করে দেখতে হলে ছবিতে টোকা দিন



দিনকতক মুখে রুচি নেই। আমার রুচি বড় ঘন-ঘন বিগড়োয়। তাই নিত্যনতুন খাদ্যখাবারের তালাশ করতে হয়। অবশ্য, আমি সে তালাশ থোড়াই করি, আমার জননী পাখির মায়ের মত এটা-ওটা খুঁটে-বেছে এনে খাইয়ে-দাইয়ে আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আজ ভোরে দেখি কোত্থেকে এক মুঠো আমরুলি শাক তুলে এনেছেন। তাই দিয়ে শুকনো-শুকনো অম্বল রাঁধা হবে। শুকনো লঙ্কা পোড়া ডলে সেই অম্বল দিয়ে চারটি ভাত মেখে খেলে এক ঠ্যাং চিতেয় তোলা লোকেরও আরো দশটা বছর বাঁচতে ইচ্ছে করবে। তা, এ হেন আমরুলি শাকের জুড়িদার মাছ নেই ঘরে। ছোট চিংড়ি নিদেনপক্ষে লাগে। ভাল হয় গলদা চিংড়ির মাথার ঘিলু হলে। গায়ে জামাটা চড়িয়ে তড়িঘড়ি বেরুলাম। দেখি, যদি কপালে থাকে!

বাজারে গিয়ে বুঝলাম, পুলকের আতিশয্যে একটু বেশি সকাল-সকালই বাজারে চলে এসেছি। এখনো মেছোরা সব এসে পারে নি। বাজারে এক ছোট ভাই পরামর্শ দিলো, “মোস্তর মোড়ে চলে যান ভাই, ওখানে পাবেনই।” ছুটলাম মোস্তর মোড়ে। সেখানেও ঢু ঢু। বিফল মনোরথ হয়ে বয়রা বাজারে এসে আবার ঘোরাঘুরি করছি। যদি আসে, যদি আসে! মাছের ঝাঁকা নিয়ে কেউ ঢুকলেই ছুটে যাচ্ছি। কিন্তু বিধি বাম, ইঁচের মুড়োর কোনো পাত্তা নেই। শেষে মন্দের ভালো হিসেবে আধসের (সের তো না, কেজি) ছটফটানো নদীর চিংড়ি কিনে ফেললাম। আমাদের এই রূপসা-ভৈরবের চিংড়ি। বড়ই মিষ্টি। ঠিক সেই সময়!– এক ছোকরা ঢুকলো এক ঝাঁকা ইঁচের মুড়ো ওরফে চিংড়ি মাছের মাথা নিয়ে। রাগে আমার হাত-পা ছুঁড়ে কাঁদার মতন অবস্থা। একটু ধাতস্থ হয়ে কিনে ফেললাম তাও আধসের।

তার পরের গল্প আর বলা ঠিক হবে না। শুধু এইটুকু বলি, দুনিয়াতে কিছু খাবার গাপুস-গুপুস খেয়ে শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে করে। আর কিছু খাবার আছে, তা অনন্তকাল বাংলায় যাকে বলে ‘আস্বাদন’ করতে ইচ্ছে করে। আমরুলি সেই জাতের চিজ।