জীবন যখন শুকায়ে যায়...

তেলাকুচ Coccinia grandisদুপুরবেলায় খেয়েদেয়ে একটা পাতলা ঝিম্ মত এসেছে। ঝিমের মধ্যে একচোখ বুজে আরেক চোখ আদ্ধেক বুজে ভাবছিলাম… “কী দুনিয়া, কী হয়ে গেল! মানবজাতির ভবিষ্যৎটাই বা কী? এত যুদ্ধ, এত রক্তপাত, এত হানাহানি!” ভাবছিলাম, “কেন বেঁচে আছি! মরে গেলেই বা ক্ষতি কী!” কিন্তু মরার কথা ভাবতেই পেটের মধ্যে কেমন পাক দিয়ে উঠল। সদ্য খাওয়া তেলাকুচের লতা আর পার্শে মাছ যেন একযোগে মিছিল শুরু করে দিল! “মানি না, মানব না!” এই হলো জ্বালা! মরা দূরস্থান, মরার কথা ভাবতে গেলেই আমার পেট কুঁই কুঁই করে ওঠে। আহা! এত বিচিত্র খাদ্যসম্ভার ত্যাগ করে ঠুস করে মরে যেতে হবে ভাবলেই ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে। স্বর্গ বলুন, নরক বলুন, পদ্মার অববাবহিকায় জন্ম নেয়া এই অজস্র শাকলতা আর স্বাদুপানি ও লোনাপানির সঙ্গমে জন্ম নেয়া এই বিচিত্র মৎসকূল ছেড়ে ফুটুস করে মরেটরে যাওয়া একদমই কাজের কথা না।

তেলাকুচ বস্তুটা অদ্ভূত। ঠিক তিতে না। কিন্তু একটা আঘ্রাণ আছে দারুণ। কচি ডাঁটাগুলো মুখে পুরে যতক্ষণ খুশি চিবোনো যায়। বড়ই আরাম। শুনেছি কী সব নাকি ঔষধি গুণাগুণ আছে, ডায়াবেটিস-ফায়াবেটিস নাকি সারে-টারে। তা হোক গে। আমার ও নিয়ে আগ্রহ নেই। খেতে ভাল, সেটাই আসল কথা। আমিষ বা নিরামিষ, সবরকমেই ভাল লাগে। নিরামিষ রাঁধলে কতকটা সুক্ত রাঁধার কায়দায় রাঁধতে হয়। আর মাছ হলে তো কথাই নেই! একটু মাখোমাখো ঝোল হবে। তোফা! আজকে মা সেই বস্তু রেঁধেছিলেন। তেলাকুচে শাক, কাঁচকলা, আলু আর পার্শে মাছের ঝোল। তার সাথে কেওড়ার অম্বল। বাদাবনের ফল। বেজায় টক। কিন্তু অম্বলটি বড় ভাল। সর্ষে ফোড়ন দিয়ে জলটক। খেয়ে অব্দি কেমন নেশা নেশা লাগছে। এই আধাচোখও আর খুলে রাখতে পারছি না। যাই আরেকটু ঝিমিয়ে নিই…