মোদের গরব মোদের আশা

আমার দেশ নিয়ে একধরণের গর্ব আমার আছে। আমার দেশটি সুন্দর। অন্তত, সেইরকম ভাবতে আমি অভ্যস্ত। শৈশব থেকে দেশের বর্ণনায় নানা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা বলা হয়েছে। আমি তার কতক দেখেছি, কতক কল্পনা করে নিয়েছি। সুন্দরের সান্নিধ্যে একরকম গর্ববোধ হয়, যেমন গর্ববোধ হয় সুন্দর বন্ধু বা বন্ধুনীটি পাশে থাকলে। আমার দেশের ইতিহাস আমাকে গর্বিত করে। সে ইতিহাস সংগ্রামের। যখন বাংলাদেশ নামে কোনো দেশের কথা কেউ কল্পনাও করেনি, সেই সুদূর অতীত থেকে এই ভূখণ্ডের মানুষের লড়াই আমাকে মুগ্ধ করে। আমি সবচেয়ে মুগ্ধ হই আমার ভাষায়। অসীম শক্তিধর সংজননশীল একটি ভাষা। এ ভাষা একদিন বিশ্বজয় করবে তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আমার ভাষার জন্য আমি গর্ববোধ করি। আমি গর্ব করি এই ভাষায় রচিত সাহিত্যের জন্য। এই ভাষার কবিরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিদের কাতারে। এতজন শ্রেষ্ঠ কবি একটি ভাষায় না থাকলেও চলে। একটি ভাষার কবিতায় একজন রবীন্দ্রনাথ আর একজন জীবনানন্দই যথেষ্ঠ। আমি গর্ব করি বাংলার গান নিয়ে। গর্ব কবি জয়নুল আর সুলতানকে নিয়ে। গর্ব করি জগদীশ বসু আর প্রফুল্লচন্দ্রকে নিয়ে। গর্ব করি তেভাগার শহীদদের নিয়ে। গর্ব করি রফিক-সালাম-বরকতকে নিয়ে। গর্ব করি মোস্তফা-বাবুল-ওয়াজিউল্লাহকে নিয়ে। গর্ব করি আসাদকে নিয়ে, তিরিশ লাখ শহীদকে নিয়ে। গর্ব করি মতিউল-কাদেরকে নিয়ে। গর্ব করি নূর হোসেনকে নিয়ে, জাফর-জয়নাল-দীপালি-কাঞ্চনকে নিয়ে। আমার গর্বের শেষ নেই এই দেশ নিয়ে।

তবু, মাঝে মাঝে একটা শীতল স্রোত আমার মেরুদণ্ডের মজ্জার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আমি ভীত, সন্ত্রস্ত ও অসহায় বোধ করি। একদল বাঙালি সেটেলার শূকরবৎস দাঁত উঁচিয়ে পাক হানাদারের মত ছুটে যাচ্ছে অরণ্য ও পাহাড় ভেদ করে। হত্যা করছে, আগুন লাগাচ্ছে, লুটপাট করছে। আমারই মত কোনো বাঙালি পিতার বীর্যে কোনো বাঙালি মায়ের গর্ভে তাদের জন্ম। তারা আমারই ভাই, বন্ধু, স্বজন। তারা আমার লজ্জা। আমার এত যে গর্ব, তার সমস্ত দিয়ে এই লজ্জা আমি ঢাকতে পারব তো?!