রসনাবিলাস

প্রস্তাবনা

কী খাওয়াটাই না খেলাম! আহা! কী খাওয়াটাই না খেলাম! একটুখানি কচুশাক। তাতে মাছ-টাছ কিচ্ছু নেই। কী জাদুতে এমন অপূর্ব অমৃততুল্য হয়ে উঠল, ঠিক বুঝতে পারলাম না। কচুশাকের পায়েস বললে খুব একটা অত্যুক্তি হবে না। সাথে একটা হৃষ্টপুষ্ট কাঁচাঝাল ঘুঁটে নেওয়ার পর পুরো আস্বাদটাই অন্য স্তরে চলে গেল। মাকে জিগ্যেস করলাম, “ও মা! কী দেছো এতে!”। মা বলল, “কী দিছি? এট্টু নারকেল কোরা, এট্টু পাঁচফোড়ন, আর একমুঠ বাদাম। চিনি-টিনি দিই নাই আজকে।” এ কচুশাক বাজার থেকে কিনতে হয়নি। একজনের ভিটে থেকে মুফতে চেয়ে আনা। বাকিটা আমার মা’র রান্নার জাদু। গতকালের ওলের সালুন থেকে গিয়েছিল অনেকটাই। আজ চেটেপুটে সবটুকু খেলাম। প্রতি গ্রাসে আবারও সেই অনির্বচনীয় অনুভুতি। চই ঝালটাও ছিল এক্কেবারে বাঙলায় যাকে বলে- ফাসক্লাস! তার সুঘ্রাণেই পেট চুঁই চুঁই করে ওঠে। শেষে বুনো আমড়ার অম্বল। এ আমড়াও পয়সা দিয়ে কেনা না। বাজারে বুনো আমড়া সচরাচর পাওয়াও যায় না। কিছুদিন আগে মা যশোর গিয়েছিলো বেড়াতে। সেখান থেকে প্রায় একবস্তা নিয়ে এসেছে। তা-ই হিমবাক্সে রেখে রেখে খাওয়া চলছে। এও আরেক অদ্ভুত বস্তু। স্বাস্থ্যে আমারই মত‒ অস্থি-চর্মসার কিন্তু ভুবন-ভুলানো তার আঘ্রাণ।

খাওয়াটা তো জম্পেশ হলো। কিন্তু আমি ভাবছিলাম অন্য কথা। আজকের দিনের ‘পুলাপান’; তাদের খাদ্য-খাবারে বৈচিত্র্য দিন দিন কমে যাচ্ছে। বড় বড় ব্রান্ডের চিপস্, বার্গার, পিৎজা, মুরগীর মাংস ভাজা এইসব স্বপ্নে-বাস্তবে খেয়ে খেয়ে স্বাভাবিক খাদ্যাভাসের বারোটা বেজে যাচ্ছে। সোজা কথায় ‘যা খেয়ে গুষ্টি বাঁচবে’ তা খেতে শেখার আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে এদের। আমার এক ভাইপোর কথা বলি। নাম বলে তাকে লজ্জ্বা দিতে চাই না। সে ব্যাটা চিংড়ি মাছ আর আলু ছাড়া আর কোনো তরিতরকারি বা মাছ খায় না। কী দশা হবে এদের! খুঁজলে প্রায় প্রত্যেক পরিবারে এরকম একটি-দুটি ‘মাল’ পাওয়া যাবে। তাই ভাবছিলাম, সাধারণ প্রতিদিনকার খাবারে যে বৈচিত্র্য আমি উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছি, তা একটু একটু করে লিখে ফেলব। তাতে যদি এদের জিভে একটু জল আসে, যদি এরা এসব শাক-পাতা-তরিতরকারি খেতে আগ্রহী হয়। ‘যা খেয়ে গুষ্টি বাঁচবে’, তা যদি এরা একটু খেতে শেখে!