মান মানে কচু….

বরাবরই কচু জাতীয় খাদ্য-খাবার আমার খুব প্রিয়। ওল, মানকচু, দুধ-মানকচু, মুখিকচু, ঘটকচু, পানিকচু, গুড়িকচু (শাক), বিষকচু, কচুর বই (লতি), কচুর ফুল, ওলের ডাঁটা‒ কোনকিছুতেই আপত্তি নেই। কচুর কন্দ অর্থাৎ শর্করাবহুল মূলের মত সুস্বাদু খাবার দুনিয়াতে খুব কমই আছে। তার সাথে অবশ্য মাছ লাগবে জুতসই। বড় শোল, শিং, বাইন, তারা বাইন, মিষ্টি পানির ট্যাংরা, ইলিশ, পার্শে, চাকা চিংড়ি, হরিণে চিংড়ি‒ এগুলোর একটা হলেই চলবে। আর লাগবে ঝাঁঝালো কাঁচাঝাল ও উৎকৃষ্ট একখণ্ড চইঝাল। যাবতীয় কচুশাকে মাছের মাথা‒ ভালো হয় ইলিশের মাথা হলে; অথবা কুঁচো চিংড়ি অথবা খলসে-চুঁচড়ো অথবা চান্দা-চুঁচড়ো অথবা টাকি মাছ লাগবে। কচুর ফুল নারকেল কোরা আর চিংড়ি মাছ দিয়ে ভাজি করলে সেদিন আর অন্য কিছু দিয়ে ভাত খাওয়া আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। মানকচু ও মানকচুর কচি পাতা দুটোরই ভর্তা অতি সু্স্বাদু। মানকচুর আরও একটি পদ আমাদের গ্রামের দিকে প্রচলিত। মানকচুর শেষের দিককার অংশ সাধারণত অপেক্ষাকৃত কম সেদ্ধ হয়। সেই অংশটুকু ফেলে না দিয়ে শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখা হয়। তাই দিয়ে যেকোনো মাছ সহযোগে রান্না ঘ্যাঁট অতি অপূর্ব বস্তু। ভর্তা খাওয়ার আরও দুটি অসাধারণ উপকরণ হলো ঘাটকোল ও বিষকচুর মাঝখানের কচি, মোড়ানো পাতা। ঘাটকোল চিংড়ি বা ক্ষুদে কাঁকড়া দিয়ে ভর্তা করলেই বেশি ভালো লাগে। বিষকচুর পাতা খেতে হয় কাঁচা- সর্ষে, প্রচুর কাঁচাঝাল ও নারকেল দিয়ে বেঁটে।

আজ আমার মা ওল রান্না করেছিলেন চাকা চিংড়ি দিয়ে। বলা বাহুল্য কব্জি ডুবিয়ে খেয়েছি। খুব কাছের দু-একজনকে গরীবখানায় ওলের সালুন দিয়ে চাট্টি ভাত খেতে ডেকেছিলাম। দুঃখের বিষয় তারা কেউ আসেননি। তারা কী বস্তু মিস করেছেন তার সাক্ষ্য দেবেন আকবর ভাই