প্যাটভরে আড্ডা

মেহেদী ভাইর ভাষায় ‘প্যাটভরে আড্ডা’। সেটি আসলে কী বস্তু তার অভিজ্ঞতানির্ভর একটা বর্ণনা দিই। আড্ডা আমরা হররোজই দিয়ে থাকি। কিন্তু এ আড্ডা সবসময় জমে না। অনেক তিথি-নক্ষত্র-স্থান-কাল-পাত্র একত্র হলে তবেই এ আড্ডা জমে। সোজা কথায়, গ্যালন গ্যালন চা আর কার্টুন কার্টুন সিগারেটে উদর ও ফুসফুস উভয়ই যখন পূর্ণ হয় (এবং যখন ভাত, তরিতরকারী ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবারের খিদের বারোটা বেজে যায়), তখন তাকে বলে ‘প্যাটভরে আড্ডা’। থুক্কু, একটা জিনিস বাদ পড়েছে। শুধু উদর ও ফুসফুসই নয়, মস্তিস্কও পূর্ণ হতে হতে প্রায় অকার্যকর অবস্থায় চলে যায়। উদাহরণ দিয়ে বলি। এইরকম এক রোঁদ আড্ডা আজ জমেছিল আমাদের চায়ের ঠেকে। পূর্ণকালীন সদস্য মোটে তিনজন। আড্ডার মোট দাম কুল্লে আশি টাকা। কী আলাপ হয় নি এ আড্ডায়! লাল চা দিয়ে শুরু। এমন লাল চা দো-জাহানে আর কোথায় পাওয়া যেতে পারে তা নিয়ে একদফা আলোচনা হলো। সেই সূত্রে এলো দার্জিলিং। আমার ইচ্ছে ছিল দার্জিলিং হয়ে শিলিগুড়ি ঢুকে ভারতবিভাগ নিয়ে গতদিনের মুলতুবি আলোচনাটা শেষ করা। কিন্তু সেটা কীভাবে যেন শান্তিনিকেতনে চলে গেলো। মিঠু ভাই (শান্তিনিকেতনী পিস) এর জন্য দায়ী। শান্তিনিকেতন থেকে মুজতবা আলী। তারপর আড্ডা আর পিছন ফিরে তাকায় নি। বহু বাঘ-সিংহ-রাজা-উজির বধ করা হলো। সক্রেটিস থেকে রবীন্দ্রনাথ, বহু এলেমদার মহা মহা ওস্তাদকে প্লানচেটে নামানো হলো বারকতক। ফুকো-দেরিদা-চমস্কির চতুর্দশ পুরুষ উদ্ধার হলো। ম্যায়, খুলনা শহরের কোন ব্যক্তির (পুং) সাথে কোন ব্যাক্তির (স্ত্রী) সম্পর্ক আদতে কীরকম তা নিয়ে নানা অজানা রোমহর্ষক তথ্য পরিবেশিত হলো। এইপ্রকারে পেট, ফুসফুস ও মস্তিষ্ক বহুবিধ অম্ল, ক্ষারক ও অপিচ বস্তুতে পরিপূর্ণ হওয়ার পর দেখা গেলো গতদিনের জের সহ এই প্যাটভরা আড্ডার মূল্য সাকুল্যে আশি টাকা! আড্ডা যুগ যুগ জিও!